বায়োফ্লক পদ্ধতিতে পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরী করার পদ্ধতি

 


বায়োফ্লকে মাছ চাষের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরি একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। বায়োফ্লক প্রজেক্টে মাছ চাষ করার আগে কোথা থেকে পানি সরবরাহ করা হবে এবং তার গুণাগুণ বা ব্যবহারের উপযোগীতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন।বায়োফ্লক মাছ চাষে পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরী করার কয়েকটা পদ্ধতি আছে।তবে এখানে বায়োফ্লক মাছ চাষে পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরী করার যে পদ্ধতিটি আলোচনা করা হলো তা প্রায় সব বায়োফ্লক মাছ চাষীরাই করে থাকেন।

আরও পরুন বায়োফ্লক কতটা লাভজনক

যেভাবে  বায়োফ্লক ট্যাংকে পানি সরবরাহ করবেন

বায়োফ্লক মাছ চাষে পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরী করার পদ্ধতির সর্বপ্রথম ধাপ হলো পানি।বায়োফ্লক ট্যাংকিতে আপনাকে অবশ্যই গভীর নলকূপ, সমূদ্র, নদী,বড় জলাশয়,লেক,বৃষ্টি ইত্যাদির উৎসের পানি গুণ মান ভাল থাকে বলে ব্যবহার করতে হবে।তবে অধিকাংশই আমরা বায়োফ্লক মাছ চাষে পানি ব্যবস্থাপনা হিসেবে গভীর নলকূপ বা মটরের পানি ব্যাবহার করি যা ফ্লক তৈরী করার পদ্ধতি ১ ধাপ এগিয়ে দেয়।

আরও পরুনবায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভের হিসাব ও মাছ চাষে সফলতার কথা

বায়োফ্লকে মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত পানি তৈরীঃ 

প্রথমে ট্যাংক ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এর পর নির্বাচিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে পানি প্রবেশ করাতে হবে। পানিতে আয়রনের মাত্রা ০.২ ppm এর বেশি হলে পানি থেকে আয়রন দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। আয়রন দূর করার জন্য প্রতি টন পানিতে ২৫- ৩০ ppm হারে ব্লিচিং পাউডার প্রয়োগের পর ১০ – ১২ ঘন্টা একটানা বাতাস সরবরাহ করতে হবে। এর পর ৫০ ppm হারে ফিটকিরি প্রয়োগ করে আরও ১২ ঘন্টা পানিতে অনবরত বাতাস সরবরাহ করতে হবে। ২৪ ঘন্টা পর পানিতে ১০০ ppm হারে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ( CaCO3) চুন প্রয়োগ করে বাতাস সরবরাহ নিয়মিত করতে হবে। এর পর নির্বাচিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে পানি প্রবেশ করাতে হবে। এ সময় পানির যে গুনাবলীর দিকে নজর রাখতে হবে তা নিচে দেয়া হলোঃ

কিনতে হবে।বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে কি কি লাগে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুন।

ফ্লক তৈরী করার কলাকৌশল

১.তার আগে জেনে নিন ফ্লক কি? 


বায়োফ্লকে যখন ব্যকটেরিয়া গুলো  grow & multiply
করে পরে এই উপকারী ব্যকটেরিয়া গুলোর কলোনি বা দলবদ্ধ অবস্থাকে ব্যকটেরিয়ার ফ্লক বলা হয়। সাধারণত ফ্লক এর আকৃতি ৫০ থেকে ২০০ মাইক্রোন পর্যন্ত হতে পারে। এই ফ্লক এর মধ্যে ৩০-৪০%  protein,  ১-১২% Fat এবং ১-৪ % বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। ফ্লক গুলো সাধারণত বাদামী বা ধুসর বর্ণের হয়ে থাকে


ট্যাংক সেট আপের বিস্তারিত তথ্য এখানে

২.ফ্লক তৈরীর জন্য পানি তৈরী

চাষ ট্যাংকের ২ ভাগের ১ ভাগ পানি নিয়ে পানিতে ১০০০ ppm হারে আয়োডিন ছাড়া লবণ প্রয়োগ করতে হবে। লবণ প্রয়োগের পর TDS পরীক্ষা করে নিতে হবে। বায়োফ্লকের জন্য ১৪০০ - ১৮০০ ppm, TDS থাকা ভাল। যদি লবণ প্রয়োগের পর কাঙ্খিত TDS পাওয়া না যায়, তা হলে কম পরিমাণলবণ প্রয়োগ করে আদর্শ মাত্রায় TDS রাখতে হবে। এর পর প্রথম ডোজে ৫ ppm প্রেবায়োটিক, ৫০ ppm চিটাগুড়, ৫ ppm ইস্ট, পানি প্রতি টনের জন্য ১ লিটার, একটি প্লাস্টিকের বালতিতে অক্সিজেন সরবরাহ করে ৮- ১০ ঘন্টা কালচার করে প্রয়োগ করতে হবে। ২য় দিন থেকে ১ppm প্রোবায়োটিক, ৫ ppm চিটাগুড়, ১ ppm ইস্ট, প্রতি টনের জন্য ১ লিটার পানি দিয়ে উপরের সময় ও নিয়মে কালচার করে প্রতি দিন প্রয়োগ করতে হবে।

বায়োফ্লকে পাঙ্গাস মাছ চাষ

৩.পানিতে অ্যামোনিয়া - নাইট্রোজেন ও ফ্লক কিভাবে সৃষ্টি করবেনঃ


পানিতে ফ্লক তৈরী করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামক দরকার। এগুলোর মধ্যে ক' একটি হলো নাইট্রোজেন, কার্বন, প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া, সূর্য আলো ও অক্সিজেন। এখানে উল্লেখ করা সব নেয়ামক পানিতে যথাযথ পরিমাণে উপস্থিত থাকলে ফ্লক তৈরী হয়ে যায়। কার্বন যোগ হয় চিটাগুড় যোগ করলে, উপকারী অণুজীব আসে প্রোবায়োটিক যোগ করার ফলে, আর অক্সিজেন আসে এয়ার রেশনের মাধ্যমে এবং সূর্য আলো প্রাকৃতিক ভাবে পাওয়া যায়। আর নাইট্রোজেনের জন্য পানিতে কিছু পচনশীল বস্তু বা প্রতি টনের জন্য ১০০ গ্রাম মাছের খাদ্য কাপড়ে বেঁধে পানিতে পঁচানোর জন্য দিতে হবে। খাদ্য পঁচে অ্যামোনিয়া সৃষ্টি হবে, আর প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া অ্যামোনিয়াকে ভেঙ্গে নাইট্রোজেনকে আলাদা করে। আর ফ্লক নাইট্রোজেন ও কার্বনকে গ্রহণ করে তাদের বংশ বৃদ্ধি করে।

এছাড়াও বায়োফ্লক মাছ চাষে পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরী করার পদ্ধতিতে এই উপায়টিও কাজে দেয়।

প্রথম ডোজে প্রোবায়োটিক(হ্যটারোটপিক ব্যাক্টেরিয়া) ফ্লক প্রো-১ Floc Pro-1) হলে ৫০ গ্রাম অথবা প্রোবায়োটিক ফ্লক প্রো-২ Floc Pro-2) হলে ৬০ গ্রাম প্রতি ১০ টন পানির ক্যাপাসিটি ট্যাংকির জন্য সাথে চিটাগুড় ৫০০ গ্রাম নিই , তারপর ১০ টন ট্যাংকির জন্য ১০ লিটার পানি একটি প্লাস্টিকের বালতিতে ভালভাবে মিশিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করে ৮- ১০ ঘন্টা কালচার করে প্রয়োগ করতে হবে। ২য় দিন থেকে ৫০ গ্রাম চিটাগুড় প্রতি দিন পানিতে গুলিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করা না গেলে ২য় ও ৩য় দিন প্রোবায়োটিক ১০ টন ট্যাংকির জন্য হ্যটারোটপিক ব্যাক্টেরিয়া) ফ্লক প্রো-১ বা ২((Floc Pro-1 or 2 ) ১০ গ্রাম এবং ৫০ গ্রাম চিটাগুড় প্রতি টনের জন্য ১ লিটার পানি দিয়ে উপরের সময় ও নিয়মে বালতিতে কালচার করে প্রয়োগ করতে পারেন, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়না

আরও পরুন

বায়োফ্লক মাছের রোগবালাই

৪.বায়োফ্লক ট্যাংকে ফ্লকের পর্যবেক্ষণঃ

বায়োফ্লক তৈরি হয়েছে কিনা তা বুঝার কিছু উপায় নিম্নে দেওয়া হলোঃ-

১. পানির রং সবুজ বা বাদামী দেখায়। 

২. পানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ কণা দেখা যায়।

৩. পানির অ্যামোনিয়া পরীক্ষা করলে পানি অ্যামোনিয়া মুক্ত দেখায়।

৪. যখন প্রতি লিটার পানিতে ০.৩ গ্রাম ফলকের ঘনত্ব পাওয়া যাবে।

৫. ক্ষুদিপানা, দেওয়ার পর তাদের বংশ বিস্তার পরিলক্ষিত হয়।


বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে পানির গুণাবলীঃ

বায়োফ্লক মাছ চাষে পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরী করার পদ্ধতির সবচেয়ে দরকারী ধাপ এটি।

১. তাপমাত্রা - ২৫ - ৩০ ° C

২. পানির রং - সবুজ, হালকা সবুজ, বাদামী।

৩. দ্রবীভূত অক্সিজেন - ৭- ৮ mg/L

৪. পিএইচ - ৭.৫ - ৮.৫

৫. ক্ষারত্ব - ৫০ - ১২০ mg/L

৬. খরতা - ৬০ - ১৫০ mg/ L

৭. ক্যালসিয়াম - ৪ - ১৬০ mg/L

৮. অ্যামোনিয়া - ০.০১ mg/L

৯. নাইট্রাইট - ০.১ - ০.২ mg/L

১০. নাইট্রেট - ০ - ৩ mg/L

১১. ফসফরাস - ০.১ - ৩ mg/L

১২. H2S - ০.০১ mg/ L

১৩. আয়রন - ০.১ - ০.২ mg/L

১৪. পানির স্বচ্ছতা - ২৫ - ৩৫ সে.মি.

১৫. পানির গভীরতা - ৩ - ৪ ফুট

১৬. ফলকের ঘনত্ব - ৩০০ গ্রাম / টন

১৭.TDS - ১৪০০০ - ১৮০০০ mg/L

১৮. লবণাক্ততা - ৩ - ৫ ppt



কি ভাবে বুঝবেন ফ্লক হচ্ছে কি না? 


বায়োফ্লক পর্যবেক্ষণ:

পানিতে যথাযথ পরিমাণ ফ্লক তৈরি হলো কিনা সেটা বুঝতে নীচের পর্যবেক্ষনগুলো নজরে রাখবেন

  • পানির রং সবুজ বা বাদামী দেখায়।
  • পানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ কণা দেখা যায়।
  • পানির অ্যামোনিয়া পরীক্ষা করলে পানি অ্যামোনিয়া মুক্ত দেখায়।
  • প্রতি লিটার পানিতে ০.৩ গ্রাম ফ্লকের ঘনত্ব পাওয়া যাবে।
  • ক্ষুদেপানা দেওয়ার পর তাদের বংশ বিস্তার পরিলক্ষিত হয়।আরও পরুনবায়োফ্লোক সিস্টেমে বৈচিত্রযুক্ত এরিটার ডিজাইনস অক্সিজেনেশন সরবরাহ করুন, মিশ্রণ

বায়োফ্লকে যখন ব্যকটেরিয়া grow শুরু করে তখন ব্যকটেরিয়া গুলো এক ধরনের মিউকাস সিকরেশান করে। মিউকাস হল এক ধরনের পিচছিল জাতীয় রস যা পরবর্তীতে কলোনী অর্থ্যাৎ  ফ্লক তৈরির জন্য কাজে লাগে। আপনার বায়োফ্লকের দেয়াল বা এিপাল, অক্সিজেন/এরেশান পাইপ গুলোর গা গুলো খেয়াল করুন যদি পিচছিল অবস্থা  বোঝা গেলে অপেক্ষা করুন  ফ্লক হবে ইনশাল্লাহ। ট্যাংকের নিচের পানি সংগ্রহ করুন হলদেটে বা ধুসর রংগের কিছু দানা বুঝা গেলে তা একটি বালতিতে নিন। কয়েকটি তেলাপিয়া মাছ দিন। যদি দানাদার উপাদান গুলো খেয়ে ফেলে তাহলে বুঝতে পারবেন এ গুলোই ফ্লক। বায়োফ্লকে কিছু খুদি পানা দিলে যদি এগুলো গ্রো করে তাহলে বুঝতে পারবেন ফ্লক হচ্ছে। প্রথমে ফ্লক সাধারণত নিচে থাকে মাছ ছেড়ে দেয়ার পর পুরো পানিতে দৃশমান হয়।

প্রোবায়োটিক একটিভিশনের কৌশল ২ এর জন্য বায়োফ্লকে FCO দেয়ার কয়েক দিন পর ফ্লক দৃশমান হতে পারে। তবে FCO দেয়ার ১ দিন পরেই মাছ দেয়া যায়। কোন সমস্যা নেই। কয়েক দিন পর অনেক ফ্লক দৃশ্যমান হয়।

সর্বোপরি এটি একটি  science & scientific কালচার সিস্টেম। তাই ফ্লক পরিমাপ করা হয় ইমহোপ কোণ দিয়ে। ১ লিটার পানিতে ৩০-৪০ মিলি ফ্লক হল আদর্শ মান।

মূলত এটি ছিল বায়োফ্লকে মাছ চাষের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরি যা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।বায়োফ্লক মাছ চাষে পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরী করার এই কয়েকটা পদ্ধতি আছে।তবে এখানে বায়োফ্লক মাছ চাষে পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরী করার যে পদ্ধতিটি আলোচনা করা হলো তা প্রায় সব বায়োফ্লক মাছ চাষীরাই করে থাকেন।

  • বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ খরচ
  • বায়োফ্লক পদ্ধতিতে তেলাপিয়া মাছ চাষ
  • বায়োফ্লক পদ্ধতিতে চিংড়ি মাছ চাষ
  • বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভ
  • বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ প্রশিক্ষণ pdf
  • বায়োফ্লক পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষ
  • বায়োফ্লক পদ্ধতিতে কি কি মাছ চাষ করা যায়
  • বায়োফ্লক তৈরির পদ্ধতি
  • বায়োফ্লক ট্যাংক তৈরি
  • বায়োফ্লক সরঞ্জাম
  • বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ বই PDF download
  • মাছ চাষ বই ডাউনলোড
  • বায়োফ্লক তৈরির খরচ
  • বায়োফ্লক ট্যাংক তৈরির নিয়ম
  • বায়োফ্লক ট্যাংক তৈরির খরচ
  • বায়োফ্লক ফিশ ফার্মিং
  • বায়োফ্লক ট্রেনিং বাংলাদেশ
  • বায়োফ্লক তৈরির পদ্ধতি
  • পুঁটি মাছ in biofloc tank
  • বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের খরচ

Post a Comment

Let us know how you are feeling about this article by commenting.

Previous Post Next Post