বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ


বায়োফ্লক কী-What is Biofloc

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ বা বায়োফ্লক ফিশ ফার্মিং বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ নতুন নয়।বায়োফ্লকের আবিষ্কারক ইসরাইলের প্রফেসর Torum Avnimelech।বায়োফ্লক পদ্ধতির মূল মন্ত্র হলো অল্প পানিতে কিভাবে বেশি মাছ উৎপাদন করা যায়।তিনি সর্ব প্রথম চিংড়ি মাছ এই পদ্ধতিতে উৎপাদন করতে সক্ষম হন।এটি একটি উদ্ভাবনী এবং সাশ্রয়ী প্রযুক্তি,যাতে মাছের বর্জ্য বা ফিড থেকে উৎপন্ন নাইট্রেট,নাইট্রাইট,অ্যামোনিয়ার মত বিষাক্ত পদার্থগুলি দরকারি পণ্য অর্থাৎ প্রোটিনাসিয়াস ফিডে রূপান্তরিত হতে পারে।বায়োফ্লক প্রযুক্তি মাছ চাষের একটি টেকসই এবং পরিবেশগত ভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ পদ্ধতি যা পানির গুনগত এবং ক্ষতিকারক রোগ সৃষ্টিকারী জীবানু নিয়ন্ত্রন করে জলীয় খাবার ব্যবস্থার জন্য মাইক্রোবায়াল প্রোটিন খাদ্য হিসেবে সরবরাহ করে।বায়োফ্লক প্রযুক্তি  মূলত বর্জ্য পুষ্টির পুনব্যবহারযোগ্য নীতি বিশেষ করে নাইট্রোজেন,মাইক্রোবায়াল জৈব বস্তুর মধ্যে খাবারের খরচ কমাতে এবং মাছের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা  বাড়াতে যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করে।সর্বাধুনিক এই প্রযুক্তিতে পুকুরের তুলনায় ১০ গুন মাছ বেশি উৎপাদন করা যায়।

বায়োফ্লকে শিং মাছের রোগ

বায়োফ্লক মাছ চাষ
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ 

বায়োফ্লক প্রযুক্তি সাধারণত অল্প জায়গায় অধিক মাছ উৎপাদনের একটি কৌশল। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া,  ফিলিপাইন এমনকি ইন্ডিয়াতেও এই চাষ পদ্ধতি এখন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আমাদের বাংলাদেশের আবহাওয়া বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষাবাদের জন্য অনেকাংশ অনুকূল।  কারন আমাদের শীতকাল মাএ ২ মাস যখন ফ্লক উৎপাদনে একটু সমস্যা হতে পারে। অনেক দেশে শীতকাল ৪/৫/৬ মাস। যার কারনে সেই সব দেশে বায়োফ্লক প্রযুক্তি অনেক ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। 
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা, চিংড়ি ও তেলাপিয়া জাতীয় মাছ চাষাবাদ করলে বেশী লাভবান হওয়া যায়। বিশেষকরে চিংড়ি ও তেলাপিয়া ফ্লক খেয়ে থাকে এজন্য এ জাতীয় মাছে খাবার খরচ অন্যন্য মাছের তুলনায় কম লাগে। আমাদের দেশে অনেকেই তেলাপিয়া চাষে সফল হয়েছেন। কারণ তেলাপিয়া মাছ যেকোন পরিবেশে সহজে নিজেকে মানিয়ে নেয়। যেমন অতিরিক্ত স্যালাইনিটি, অতিরিক্ত  তাপমাএা , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, দ্রুত বর্ধণশীলতা ইত্যাদি এ মাছের প্রধান বৈশিষ্ট্য। তেলাপিয়া মাছটি ৪-৪.৫ মাসে বিক্রয় উপযোগী হয়। বায়োফ্লকে বছরে ২ টি হারভেষ্ট করা যায়। তবে তেলাপিয়াটি হতে হবে মনোসেক্স প্রজাতীর। আর শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা চাষাবাদটি একটু sensitive.  পানির সবগুলো গুণাগুণ সবসময় ঠিক রাখতে হবে। বিশেষ করে Salinity বিষয়টি important. সব সময়  salinity ১-১.৫ পিপিটি এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করতে হবে। PH, এ্যমোনিয়া optimum রাখতে পারলে এ মাছ গুলো চাষাবাদ করে অনেক লাভবান হওয়া সম্ভব। এ জাতীয় মাছ গুলোও বৎসরে ২ টি হারভেষ্ট সম্ভব তবে বড় সাইজের পোনা ছাড়তে হবে এবং ঘনত্ব কম দিতে হবে। তবে যারা প্রথম চাষ শুরু করবেন তারা শুরুতে মনোসেক্স তেলাপিয়া দিয়ে শুরু করুন এর পরবর্তী শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা চাষাবাদ বুঝতে সহজ হবে এবং ঝুকি কম হবে। আর একটি কথা যারা এখনও শুরু করেন নি তারা অবশ্যই শীতের পর শুরু করবেন। শীতে ফ্লক এর সমস্যা হতে পারে।

আরও পরুনবায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভের হিসাব ও মাছ চাষে সফলতার কথা

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে অন্যান্য দেশ

বায়োফ্লকে ইন্দোনেশিয়াতে ১০০০ লিটারের বায়োফ্লক ট্যাংকে তারা ১০০ কেজি মাছ উৎপাদন করে থাকে ৪/৫ মাসে। তবে আমাদের দেশেও হয়ত সম্ভব তবে ভালোমানের প্রোবায়োটিক দরকার। তবে আমাদের দেশে ১০০০ লিটার বায়োফ্লকে ৫০/৬০ কেজি উৎপাদন পাওয়া যাচ্ছে।

বায়োফ্লক ট্যাংকে মাছের পরিমান

তো আসুন এখন জানি কি পরিমান মাছ ছাড়ব তার হিসেব। 

ধরে নিলাম আপনি ১০০০০ লিটার বায়োফ্লক ট্যাংকে মাছ কালচার করবেন।সেখানে কমপক্ষে ১৪০০০ মাগুরের পোনা অনায়াসে ছাড়তে পারবেন।ধরে নিলাম ৪০০০ পোনা নষ্ট হয়ে গেল।আর ১০০০০ পোনা ৩/৪ মাসের মাথায় কেজিতে ১০ টা করে হবে।মানে ১০০০০/১০=১০০০ কেজি মাছ পেলেন ৩/৪ মাস পর।প্রতি কেজির মূল্য ৪০০ টাকা করে ধরলে ১০০০*৪০০=৪,০০০০০ লক্ষ টাকা আপনি ৩/৪ মাসেই আয় করতে পারছেন।আর ১ বছরে যদি ৪ বার হার্ভেস্টিং করতে পারেন তাহলে ১বছরে আপনার আয় দ্বারাবে ৪,০০০০০*৪=১৬,০০০০০ লক্ষ টাকায়।

আরও একটি হিসাব দেখুন

ধরুন আপনার একটি ১০০০ লিটারের বায়োফ্লক ট্যাংক আছে। আপনি তেলাপিয়া মাছ ছাড়বেন। আপনার প্রডাকশান টার্গেট ৬০ কেজি ৪ মাসে। তেলাপিয়া সাধারনত ৪ মাসে ২/৩ টায় কেজিতে আসে। যদি আপনি ২ টায় কেজিতে আনতে চান তাহলে ১২০ টি পোনা ছাড়ুন। আার যদি ৩ টায় কেজি আনতে চান তাহলে ১৮০ টি পোনা ছাড়ুন। কিছু মাছ মারা যেতে পারে তাই ৫% পোনা অতিরিক্ত ছাড়ুন। মাছের পোনাগুলো ছাড়ার সময় যেন ১৫০০-২০০০ পিসে ১ কেজি হয় সেদিকে খেয়াল করুন। শিং, পাবদা, গুলশা, মাগুর পোনা গুলো ২০০ পিসে ১ কেজি ছাড়ার চেষ্টা করুন তাহলে বছরে ২ টি ফলন বিক্রি করতে পারবেন। এভাবে যেকোন মাছের যেকোন পরিমান পোনার হিসেব করে পোনা ছাড়তে পারবেন।

বায়োফ্লক ট্রেনিং 
বায়োফ্লক 
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার নিয়ম

কিভাবে বায়োফ্লকে মাছ চাষ শুরু করবেন তার পুরো গাইডলাইন পাবেন এইখানে।আপনার বায়োফ্লক ট্রেনিং এর প্রয়োজন হবে বলে আমি মনে করি।যদি আপনি আমার এই বায়োফ্লকে মাছ চাষের পুরো গাইডলাইন ফলোও করেন।

Post a Comment

Let us know how you are feeling about this article by commenting.

Previous Post Next Post