বাংলাদেশে বায়োফ্লক-Biofloc in Bangladesh


বাংলাদেশে বায়োফ্লকে ১০০০০লিটার ট্যাংকে ৯০০০ মাগুরের পোনায় ৩/৪ মাস পর ৪,০০০০০ লক্ষ টাকা আয়ের পথ তৈরি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যাবসা হলো বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ।কারণ এই পদ্ধতিতে অল্প জায়গায় কিন্তু অধিক ঘনত্বে প্রচুর পরিমানে মাছ উৎপাদন সম্ভব।হ্যাঁ এটা আপনি আমি যে কেউ যে কোন সময় শুরু করতে পারি।শুধু অল্প কিছু টাকা ইনভেস্ট করতে পারলেই শুরু করা যাবে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ।আপনি এখনো এটা শুরু কিভাবে করবেন বুজতে পারছেন না?তাহলে আমার এই ব্লগটি পড়তে থাকুন।আশা করি আপনি পুরো একটি গাইডলাইন পাবেন।জানতে চান বায়োফ্লকের আবিষ্ককার কিভাবে হলো?

তো তার আগে জেনে নিন বছরে আপনার আয় কেমন হবে এটা থেকে


ধরে নিলাম আপনি ১০০০০ লিটার বায়োফ্লক ট্যাংকে মাছ কালচার করবেন।সেখানে কমপক্ষে ১৪০০০ মাগুরের পোনা অনায়াসে ছাড়তে পারবেন।ধরে নিলাম ৪০০০ পোনা নষ্ট হয়ে গেল।আর ১০০০০ পোনা ৩/৪ মাসের মাথায় কেজিতে ১০ টা করে হবে।মানে ১০০০০/১০=১০০০ কেজি মাছ পেলেন ৩/৪ মাস পর।প্রতি কেজির মূল্য ৪০০ টাকা করে ধরলে ১০০০*৪০০=৪,০০০০০ লক্ষ টাকা আপনি ৩/৪ মাসেই আয় করতে পারছেন।আর ১ বছরে যদি ৪ বার হার্ভেস্টিং করতে পারেন তাহলে ১বছরে আপনার আয় দ্বারাবে ৪,০০০০০*৪=১৬,০০০০০ লক্ষ টাকায়।

আরও পরুন বায়োফ্লক কতটা লাভজনক


১।কি কি মাছ চাষ করা যায় এ পদ্ধতিতে



সব ধরনের মাছ আপনি বায়োফ্লক 
পদ্ধতিতে চাষ করতে পারবেন।আগে যখন বাংলাদেশে এ পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু হয় তখন কৈ,মাগুর,শিং এই ৩ প্রকার মাছ চাষ হতকিন্তু বর্তমানে এ পদ্ধতিতে লাভজনক ভাবে কৈ,মাগুর,শিং,পাবদা, গুলশা,কাতলা,শোল,তেলাপিয়া, সরপুঁটি সহ প্রায় সব ধরনের মাছ চাষ করা হয়।

আরও পরুন বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভের হিসাব ও মাছ চাষে সফলতার কথা

২।বায়োফ্লকে মাছ চাষ শুরু করতে যা লাগবে


মূলত বায়োফ্লকে মাছ চাষ ট্যাংকে করা হয়।আপনাকে আগে ঠিক করতে হবে আপনি কত লিটার ট্যাংকে মাছ কালচার করবেন।হতে পারে সেটা ১০০০,৫০০০,১০০০০,১৫০০০ অথবা ২০০০০ লিটার।তো বুজতেই পারছেন ট্যাংকের সাইজের সাথে খরচটাও একটু বারবে।তো ট্যাংক নির্বাচনের পর আপনাকে 
  1. কয়েকটা ইট
  2. লোহার খাঁচা
  3. ভালো মানের ত্রিপল বা তারপলিন,
  4. এয়ার পাম্প
  5. এয়ার স্টোন
  6. ph মিটার
  7. TDS মিটার
  8. অ্যামোনিয়া কীট
  9. ক্যালসিয়াম কার্বনেট
  10. আউটলেট তৈরির পাইপ

৩। কোথায় পাবেন এইগুলো


বর্তমানে দেশে কমার্শিয়ালি অনেকেই এসব পণ্য সরবরাহ করছেন। তবে আপনি চাইলে daraz.com অনলাইন থেকেও কিনতে পারেন।তাছারা ফেইসবুকেও বায়োফ্লক প্রোডাক্ট সাপ্লাই দেয় এরকম অনেক পেইজ আছে সেখান থেকেও নিতে পারেন।আমার কাছ থেকে নিতে চাইলে যোগাযোগ করতে এখানে ক্লিক করুন

ট্যাংক সেট আপের বিস্তারিত তথ্য এখানে


৫।পোনা নির্বাচন


ট্যাংক ভালোমত সেট আপ দেবার পর আপনাকে ওয়াটার প্রিপারেশন করতে হবে।এরপর আপনাকে সুস্থ সবল মাছের পোনা ট্যাংকে ছাড়তে হবে।আর দিনের ২৪ ঘন্টার কমপক্ষে ১৮ ঘন্টা এয়ারেশন দিতে হবে।


আরও পরুন বায়োফ্লকে পাঙ্গাস মাছ চাষ

৬।মাছের খাবার

বায়োফ্লকে মাছ চাষ  মাছ চাষ করতে হয় 
কিছু নিয়ম মেনে।কারণ এটা পুকুর না।পুকুরে মনে করেন আপনি এয়ারেশন ছারাই মাছ চাষ করতে পারবেন।কিন্তু বায়োফ্লকে এয়ারেশন ছারা সম্ভব না।যেহেতু এখানে অল্প জায়গায় মাছ চাষ করা হয় তাই বেশি খাবার মাছকে দেওয়াও কিন্তু আপনার লসের কারণ হতে পারে।অর্থ্যাৎ বায়োফ্লক ট্যাংকের পানির পরিমাণ, মাছের পরিমাণ ও মাছের ওজনের ভিত্তিতে খাবার দিতে হবে।মনে রাখবেন বেশি বা কম খাবার মাছের বৃদ্ধি বা রোগের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হয়।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে চিংড়ি বা তেলাপিয়া মাছ চাষের ১০টি সহজ উপায়

৮।বায়োফ্লক পদ্ধতিতে পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক তৈরী করার কলাকৌশল

বায়োফ্লকে মাছ চাষের জন্য পানি ব্যবস্থাপনা ও ফ্লক একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। যেকোন মাছ বা চিংড়ি চাষ বা বায়োফ্লক প্রজেক্ট করার আগে পানির উৎস কি হবে এবং তার গুণাগুণ বা ব্যবহারের উপযোগীতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা জরুরী।

পানির উৎসঃ গভীর নলকূপ, সমূদ্র, নদী, বড় জলাশয়,লেক,বৃষ্টি ইত্যাদির উৎসের পানি গুণ মান ভাল থাকলে ব্যবহার করা যায়।

বায়োফ্লকের জন্য উপযোগী পানি তৈরীঃ

প্রথমে ট্যাংক ব্লিচিং পাউডার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এর পর নির্বাচিত পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করে পানি প্রবেশ করাতে হবে।

বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষে পানির গুণাবলীঃ ১. তাপমাত্রা – ২৫ – ৩০ °C

২. পানির রং – সবুজ, হালকা সবুজ, বাদামী।

৩. দ্রবীভূত অক্সিজেন – ৭- ৮ mg/L

৪. পিএইচ – ৭.৫ – ৮.৫

৫. ক্ষারত্ব – ৫০ – ১২০ mg/L

৬. খরতা – ৬০ – ১৫০ mg/ L

৭. ক্যালসিয়াম – ৪ – ১৬০ mg/L

৮. অ্যামোনিয়া – ০.০১ mg/L

৯. নাইট্রাইট – ০.১ – ০.২ mg/L

১০. নাইট্রেট – ০ – ৩ mg/L

১১. ফসফরাস – ০.১ – ৩ mg/L

১২. H2S – ০.০১ mg/ L

১৩. আয়রন – ০.১ – ০.২ mg/L

১৪. পানির স্বচ্ছতা – ২৫ – ৩৫ সে.মি.

১৫. পানির গভীরতা – ৩ – ৪ ফুট

১৬. ফলকের ঘনত্ব – ৩০০ গ্রাম / টন

১৭.TDS – ১৪০০০ – ১৮০০০ mg/L

১৮. লবণাক্ততা – ৩ – ৫ ppt

পানিতে ফ্লক তৈরিঃ– প্রথম ডোজে ৫ ppm প্রেবায়োটিক, ৫০ ppm চিটাগুড়, ৫ ppm ইস্ট, পানি প্রতি টনের জন্য ১ লিটার, একটি প্লাস্টিকের বালতিতে অক্সিজেন সরবরাহ করে ৮- ১০ ঘণ্টা কালচার করে প্রয়োগ করতে হবে। ২য় দিন থেকে ১ppm প্রোবায়োটিক, ৫ ppm চিটাগুড়, ১ ppm ইস্ট, প্রতি টনের জন্য ১ লিটার পানি দিয়ে উপরের সময় ও নিয়মে কালচার করে প্রতি দিন প্রয়োগ করতে হবে।

বায়োফ্লকের এক্টিভিটি পর্যবেক্ষণঃ

পানিতে যথাযথ পরিমাণ ফ্লক তৈরি হলে-

১. পানির রং সবুজ বা বাদামী দেখায়।

২. পানিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ কণা দেখা যায়।

৩. পানির অ্যামোনিয়া পরীক্ষা করলে পানি অ্যামোনিয়া মুক্ত দেখায়।

৪. প্রতি লিটার পানিতে ০.৩ গ্রাম ফ্লকের ঘনত্ব পাওয়া যাবে।

৫. ক্ষুদিপানা দেওয়ার পর তাদের বংশ বিস্তার পরিলক্ষিত হয়।

আরও পরুন 

৯।হার্ভেস্টিং


প্রায় ৩ থেকে ৪ মাসের মাথায় যখন দেখবেন যে আপনার মাছ ১০/১৫ লাইনের (কেজিতে ১০/১৫ টা) তখন বুঝবেন যে আপনার মাছ বাজারজাতকরণের উপযোগী।আর এভাবেই আপনার মাছের ১ম হার্ভেস্টিং হয়ে গেল।মানে আপনি বছরে ৩/৪ বার মাছের হার্ভেস্টিং করতে পারবেন।

১০।বায়োফ্লকের সুবিধা-Opportunity of biofloc

১। পানি পরিবর্তন অনেক কম করতে হয়।মাছ চাষের অন্যতম নিয়ামক অ্যামোনিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উপকারী ব্যাকটেরিয়া পানির গুণাগুণ রক্ষা করে ফলে ট্যাংকের পানি খুব কম পরিবর্তন করলেই চলে।

২। উপকারী ব্যকটেরিয়া পানির গুনগত মান ভালো রাখে।

৩। ফিড পূণরায় অধিক পরিমাণের প্রোটিন খাবারে পরিণত হয়।

৪। বায়োফ্লক প্রাকৃতিক ভাবে অ্যামোনিয়া কমায় এবং হাইড্রোজেন সালফাইডের মাত্রা  হ্রাস করে।

৫। মাছের বেঁচে থাকার হার এবং মাছের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ায়।

৬। বায়োফ্লকের পানির প্যারামিটার ঠিক থাকে।

৭। ন্যাচারাল ফুড অধিক পাওয়া যায়,মাছের বৃদ্ধি ভালো হয়।

৮। অধিক ঘনত্বে ছোট এরিয়াতে মাছ চাষ করা যায়

৯। উচ্চ বায়োসিকিউরিটি: এই প্রযুক্তিতে যেহেতু উপকারী ব্যাকটেরিয়া (প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া) ব্যবহার করা হয় যা পানির গুণাগুণ বৃদ্ধি ও রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে পুরো সিস্টেমকে উচ্চ বায়োসিকিউরিটি প্রদান করে।

১০।অ্যামোনিয়া দূরীকরণ: সিস্টেমে বিদ্যমান উপকারী ব্যাকটেরিয়া মাছ চাষের প্রধান নিয়ামক অ্যামোনিয়াকে মাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান প্রোটিনে রূপান্তর করার মাধ্যমে সিস্টেমে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়ার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

আরও পরুন 

কিছু গুরূত্বপূর্ণ কথাঃ

বায়োফ্লক শুরুর আগে আপনি কিছু শুনে নিন। বায়ো সিকিউরিটি কিন্তু আপনাকেই মেইনটেইন করতে হবে ।কারণ ভিন্ন একটা প্রজেক্ট,অনেকেই দেখতে আসবে,মাছ ধরবে,ট্যাংক নরাবে।আপনারও হয়তো ব্যাপারটা ভালোই লাগবে যে সবাই আসতেছে দেখার জন্য।কিন্তু দিন শেষে যখন আপনি ব্যর্থ হবেন তখন কিন্তু তারাই আপনার সমালোচনা করবে।কাজেই ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন।

তাহলে আপনি কি ভাবছেন বায়োফ্লক নিয়ে?কবে শুরু করবেন বায়োফ্লক?কমেন্ট করে জানাবেন আশা করি।

ট্যাগ

বায়োফ্লক তৈরির খরচ
বায়োফ্লক ট্যাংক তৈরির নিয়ম
বায়োফ্লক ট্যাংক তৈরির খরচ
বায়োফ্লক ফিশ ফার্মিং
বায়োফ্লক ট্রেনিং বাংলাদেশ
বায়োফ্লক তৈরির পদ্ধতি
পুঁটি মাছ in biofloc tank
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের খরচ
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ খরচ
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে তেলাপিয়া মাছ চাষ
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে চিংড়ি মাছ চাষ
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ লাভ
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ প্রশিক্ষণ pdf
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে পাবদা মাছ চাষ
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে কি কি মাছ চাষ করা যায়
বায়োফ্লক তৈরির পদ্ধতি
বায়োফ্লক ট্যাংক তৈরি
বায়োফ্লক সরঞ্জাম
বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ বই PDF download
মাছ চাষ বই ডাউনলোড

2 Comments

Let us know how you are feeling about this article by commenting.

  1. বায়োফ্লক ট্রেনিং কক্সবাজার কোথায় শিখবো

    ReplyDelete
    Replies
    1. বলতে পারলাম না।তবে এই পোস্ট দেখতে পারেন
      https://www.edurekabd.xyz/2020/09/Biofloc%20fish%20farming%20in%20Bangladesh.html

      Delete

Post a Comment

Let us know how you are feeling about this article by commenting.

Previous Post Next Post